ইসলাম অন্য সব গতানুগতিক ধর্মের মতো নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। ইংরেজিতে যাকে ‘কমপ্লিট কোড অব লাইফ’ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯) লক্ষণীয় বিষয় হলো- ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মই তাদের ব্যাপারে এরূপ গ্রহণযোগ্যতার নিশ্চয়তা ও সীমাবদ্ধতা তৈরি করে দেয়নি। কেবল ইসলামেই এরূপ বাক্যের অবতরণ লক্ষ করা যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না; বরং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
ইসলামকে অনুসরণ করে চললে কেউ কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। আর সেই সব নির্দেশনা কুরআনুল কারিমে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে লিখিত রয়েছে। আর এই লিখিত বিষয়গুলো মেনে চললেই একজন মানুষ সফলতার চূড়ায় আরোহণ করতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি এ কিতাবে (কুরআনে) কোনো বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি।’ (সূরা আনআম-৩৮)
জীবনব্যবস্থা বলতে মূলত বুঝায় জীবন চলার পথে কোনো একটি বিষয় কেন্দ্র করে তার নিয়ম অনুসরণ করে জীবনযাপন করা। ওহিভিত্তিক জ্ঞান ছাড়া কখনো কেউ সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে চলতে পারে না। কারণ মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার ফলে মানুষ বিপদে পড়তে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা সব কিছু আগে থেকেই জানেন। তাই তিনি সেসব বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করেন যা তার বান্দার জন্য অকল্যাণকর। প্রকৃত কথা হলো এই, মানুষের জ্ঞান যে স্থানে গিয়ে শেষ হয়ে যায়, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান সেখান থেকেই শুরু হয়। কারণ তিনি স্রষ্টা, মানুষ সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-‘তোমার কোনো কল্যাণ হলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আর তোমার কোনো অকল্যাণ হলে তা তোমার নিজের কারণেই হয়।’ (সূরা নিসা-৭৯)
মানুষ তার জীবনে চলতে গেলে কয়েকটি বিষয়ের সম্মুখীন হয়। সেগুলো হলো- ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সামগ্রিক কর্মতৎপরতা। এসব বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চললে সে যেমন সব স্থানে সফল হবে তেমন আল্লাহর কাছেও সে সম্মানিত হবে। ব্যক্তিগত জীবনে একজন মানুষের সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। যেমন বিশ্বনবী সা: রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য তাগিদ দিতেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন।’ (বুখারি-৫৯৯) এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।’ (সূরা নাবা : ৯-১১) আধুনিক বিজ্ঞান আজ তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা এবং দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার ক্ষতিগুলো আবিষ্কার করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে এরূপ প্রত্যেকটি বিষয়ে ইসলাম তার নির্দেশনা কুরআনে জানিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে পারিবারিক জীবনে অধিকাংশ মানুষই সুখী নয়। মোবাইল হাতে নিলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওয়ালে দেখা যায় ডিভোর্সের হিড়িক। ইসলামের রীতিনীতিগুলো অবজ্ঞা করা এবং না মানার ফলেই আজ সমাজের এমন চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের আচরণ কীরূপ হবে এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে কুরআন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা বলে, হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো।’ (সূরা আল ফুরকান-৭৪)