jamiatulbalag

বিভিন্ন এলাকায় ইদানীং পূজা উৎসবের জন্য সনাতনধর্মীয় ভাইয়েরা মুসলিমদের থেকে চাঁদা কালেকশন করছেন বাজারের দোকানপাট ও ব্যক্তি বিশেষে। ব্যাপারটি সম্পর্কে উভয়পক্ষের স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে হাজারো মুসলিম জাতি মনের অজান্তে ‘শিরক’ এর সাথে একাত্ম হয়ে পড়ছেন।
ইসলামে অন্য ধর্মাবলম্বী যে কাউকে, অর্থাৎ অসহায়, ফকির, মিসকিন, দরিদ্র হলে তার ভরণপোষণের জন্য দান-সাদকা করা জায়েজ (আল-মাজমু : ৬/২৪০, আল-মুগনি : ২/৪৯২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: যখন শুধু মুসলিমদের দান করার নির্দেশ দেন তখন অবতীর্ণ হয়-‘তাদের সৎপথ গ্রহণের দায়িত্ব তোমার নয়; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করো, তা তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থেই ব্যয় করে থাকো। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করো তার পুরস্কার তোমাদের পুরোপুরি দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। এরপর তিনি দান করার নির্দেশ দিলেন সব ধর্মের অনুসারী সাহায্যপ্রার্থীদের।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, সূরা বাকারার ২৭২ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
অমুসলিমদের প্রতি মহানুভব আচরণের নির্দেশনা : কুরআনে অমুসলিমদের প্রতি মহানুভব ও ভালো ব্যবহারের নির্দেশ পাওয়া যায়, যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে লড়াই করেনি এবং বাড়িঘর থেকে তোমাদের তাড়িয়ে দেয়নি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের পছন্দ করেন।’ (সূরা মুমতাহিনা, আয়াত-৮)
আসমা রা: রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন। তিনি ইসলামের প্রতি আগ্রহী নন। আমি কি তার সাথে ভালো ব্যবহার করব? আল্লাহর রাসূল সা: বললেন, ‘হ্যাঁ, তার সাথে সদ্ব্যবহার করো।’ (বুখারি-৩১৮৩) রাসূল সা: একবার এক ইহুদি বালককে অসুস্থ হয়ে পড়ার দরুন দেখতে যাওয়ার কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। (বুখারি-৫৬৫৭)

তা ছাড়া হাদিসে এসেছে, একদিন সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! প্রাণীর জীবন রক্ষায় সাওয়াব রয়েছে কী? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক তাজা প্রাণ রক্ষায় সাওয়াব রয়েছে।’ (বুখারি-২৩৬৩, মিশকাত-১৯০২)
পূজা উৎসবে চাঁদা দানের বিধান : ইসলামে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জাকাত ব্যতীত অন্য সাধারণ দান করা বৈধ। (কিতাবুল উম্ম : ৩/১৫৭) বাস্তুহারাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া যেমন বৈধ তেমনি তাদের সাথে সৌজন্যতা রক্ষার্থে চলাফেরা, লেনদেন সব কিছু বৈধ। তবে তাদের পূজা বা ধর্মীয় উৎসবে একটি পয়সা প্রদান করাও সম্পূর্ণ হারাম। এতে সর্বস্তরের সব ফোকহায়ে কেরাম-মুহাক্কিক ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আর (তোমরা) পাপিষ্ঠদের (কাফিরদের) প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।’ (সূরা হুদ, আয়াত-১১৩) এ ছাড়া আল্লাহ আরো বলেন- ‘আর তোমরা গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করো না।’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত-২)

‘পূজা হিন্দুদের একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাদের প্রোগ্রামে চাঁদা দেয়া কুফর, শিরক এবং নাজায়েজ কাজে সাহায্য করার নামান্তর। এটি কুরআনের আলোকে সম্পূর্ণ নাজায়েজ।’ (ফতোওয়ায়ে দারুল উলুম, ফতোয়া নং-১৫২৬৪)

এ ছাড়াও ৬২৪৬৪ ও ৬৩৯৫০ নং ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও হারাম। পরস্পর সম্পর্কের ভিত্তিতে হোক অথবা চাপে পড়ে; কোনো অবস্থায়ই যাওয়া জায়েজ নয়। ঘুরেফিরে দেখার জন্যও যাওয়া যাবে না।’ হাদিসে রয়েছে, হজরত ওমর রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হতে থাকে।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-১৬০৯, বায়হাকি, সুনানুল কুবরা-১৮২৮৮)
প্রখ্যাত ইমাম আবু হাফস আল কাবিরের মতে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ৫০ বছর আল্লাহর ইবাদত করে, এরপর সে যদি মুশরিকদের উৎসবের সময় সেই দিনকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কোনো মুশরিককে অথবা তাদের উৎসবে কিছু উপহার/অর্থ দেয়, তবে সে কুফরি করেছে এবং নিজের সব আমল ধ্বংস করেছে।’ (দুররুল মুখতার : ৬/৭৪৫-টিকা দ্রষ্টব্য)

সুতরাং, অমুসলিমদের ভাত-কাপড়, ঘরবাড়ি নির্মাণের বা চিকিৎসার জন্য দান করা জায়েজ হলেও ধর্মীয় উৎসবের জন্য কোনোভাবেই জায়েজ নয়।
সুতরাং, যেখানে পূজাপার্বণ বা অমুসলিমদের উপাসনালয়ে যাওয়াটাও বারণ করা হয়েছে হাদিসে সেখানে চাঁদা দেয়াটা রীতিমতো হারাম এবং শিরকি কাজে সহযোগিতার নামান্তর, গুনাহে কবিরা। অতএব, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ইসলামের যথার্থ মর্মার্থ অনুধাবনের মাধ্যমে আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *